বিসমিল্লাহীর রাহমানীর রাহীম
আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা আবদিল্লাহিল হুসাইন সালাওয়াতুল্লাহি ওয়া সালামু আলাইকা।
আবারও এসেছে সেই মুহাররাম, আশুরা, আওলাদে রাসুলের আযাদারী, মজলিস ও মাহফিল এবং কারবালার শহীদগণের মাতমের সময়।
আশুরা; বেহশতের সর্দার ইমাম হুসাইন (আ:) ও তাঁর 72 জন উৎসর্গকারী সাথীদের নিপীড়িত ও নির্যাতিতভাবে শাহাদত বরণের দিন।
আশুরা; হযরত মুহাম্মাদ (স) এর সঠিক ইসলামের সাথে উমায়্যাদের প্রচলিত ইসলামের মোকাবিলার দিন, হুসাইনী ও এজিদিদের যুদ্ধের দিন।
আশুরা; অপরিমেয় দুর্যোগের দিন, যে দিনে সাধীন চিন্তাধারীদের মাওলা হুসাইন (আ), ইয়াযিদ ইবনে মোয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সৈন্যদের মোকাবেলায় দাড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন: আলে আবু সুফিয়ানের অনুসারীরা দুর্ভাগ্য তোমাদের, যদি দীনের অন্তর্ভুক্ত না হও ও কিয়ামতের ভয় না পাও, অন্তত্বপক্ষ্যে নিজের দুনিয়াতে সাধীন মানুষের ন্যায় থাক।
আশুরা; নামায কায়েমের দিন, যেদিন ইমাম হুসাইন (আ:) তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে ইয়াযিদী সৈন্যদের হাজারও তীরের সামনে জামায়াতে নামায আদায় করেছিলেন।
আশুরা; সেই দিন, যেদিন শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন (আ:) তাঁর দলের সেনাপতি ও অনুগত ভাই হযরত আবাল ফাযলিল আব্বাসের শাহাদতের পর, যখন তাঁর আর কোন সাহাবী ও সাহায্যকারী ছিলনা এবং নারী ও শিশুদের ক্রন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন, উচ্চ কন্ঠে বলেছিলেন: কেউ কি আছে আমাকে সাহায্য করবে, কেউ কি আছে নবীর আহলে বাইতদের আস্তানা রক্ষার্তে রুখে দাড়াবে...
কিন্তু ইয়াযিদী সেনাবাহিনী থেকে কেউ তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
আশুরা; খোদা হাফেযি ও বিদায়ের দিন, ভগ্নহৃদয় ও ব্যথীত পিতার খোদা হাফেযি তাঁর তৃষ্ণার্ত যুবকের সাথে, সেই যুবক যে সর্বাপেক্ষা নবীর অনুরূপ ছিল, যখন তাঁর টুকরো টুকরো হওয়া রক্তাত্ব শরীর ঘোড়ার উপর থেকে মাটিতে পড়ে বাবা হুসাইন তাঁর কাছে পৌছান ও ফরিয়াদ করে বলেন: হে আমার সন্তান! আল্লাহ তায়ালা ধংশ করুক সেই গোত্রকে যারা তোমাকে হত্যা করেছে, অতপর সন্তানের মুখমণ্ডলের উপর নিজের মুখ রেখে বলেন: আলী (আকবার) তোমার পর নিপাত যাক এই দুনিয়া।
আশুরা; শুষ্ক ও পানি বন্ধের দিন, শুষ্ক ও তৃষ্ণার্ত ঠোটগুলির দিন, শিশুদের আর্তনাদ ও মুছিবতের দিন।
আশুরা; যে দিন নবীর (স) চোখের নূর হযরত আবা আবদিল্লাহিল হুসাইন (আ:) তাঁর ছয় মাসের শিশু আলী আজগারকে ইয়াযিদ বাহিনীর সামনে এনে বলেন: ওহে সম্প্রদায়! যদি আমার প্রতি সদ্বয় না হও তবে এই শিশুর প্রতি সদ্বয় হও, তোমরা কি দেখতে পারছোনা পিপাসাতে সে কিভাবে তাঁর ঠোটগুলিকে একটি আরেকটির সাথে লাগাচ্ছে, কিন্তু তারা একফোটা পানির পরিবর্তে তিন শাখা বিশিষ্ট তীর তাঁর দিকে নিক্ষেপ করে।
আশুরা; হুসাইনীদের প্রতি ইয়াযিদিদের আক্রমনের দিন, নারী ও নিষ্পাপ শিশুদের প্রতি হামলা করার দিন ও ফুপি আম্মা হযরত যায়নাবের (সা) বন্দী হবার দিন।
আশুরা; পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা কঠিন দিন, ইতিহাসের সবথেকে হৃদয়বিদারক দিন, জুলুম ও ফ্যাসাদের বিরুদ্ধে উত্থানের দিন, আল্লাহর দিনকে প্রতিষ্ঠা রাখার জন্য প্রকৃত বান্দাদের জীবন উৎসর্গ করার দিন, আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জন দেয়া, শহীদ ও শাহাদতের দিন।
আশুরা; সেই দিন, যেদিন বিস্মৃত হবার নয়, মনে রাখতে হবে যাতে করে সম্মান ও মর্যাদা বজায় থাকে।
আশা করা যায় মুহিব্বিনে আহলে বাইতে রাসুলুল্লাহ (স) প্রত্যেক বছরে, পূর্বের বছরের থেকে আরো বেশি গুরুত্বের সাথে শোক মজলিস পালন করবে। ক্রন্দন,আহাজারী ও মাতম মজলিসের সাথে সায়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইন (আ:) ও আওলাদে রাসুল (স) এবং কারবালার শহীদগণের শোক মাহফিল উদযাপন করবে।
আলে রাসুলের এই বৃহৎ মুছিবতকে নবী করিম (স) ও তাঁর সর্বশেষ সন্তান হযরত মাহদী (আ:) ও সমস্ত আশেকান ও মুহিব্বিনে আহলে বাইত (আ) কে জানাই শোকবার্তা।
আল্লাহ তায়ালার নিকট আপনাদের জন্য আযাদারদের জন্য ছওয়াব ও পুরস্কার কামনা করি।
র্সবশেষে এই প্রত্যাশা করি, সমস্ত সমস্যার সমাধান হোক, মুসলমানদের জয় বিশেষ করে নিপীড়িত মুসলমানদের; মিয়ানমার, ইয়ামান, বাহরাইন, সিরিয়া, ইরাক, নাইজারিয়া ও আফগানিস্তানের জয় হোক।
লাব্বাইক ইয়া হুসাইনুশ শহীদ।