আহলে বাইতের মাযহবের আহকামে পবিত্রতা (তাহারাত)

ভূমিকা

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ۚ وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا ۚ وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ ۚ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَٰكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং মাসেহ করবে মাথা ও পদযুগলের জোড়া পর্যন্ত এবং যদি তোমরা জুনুব হয়ে থাক তবে গোসল করে নাও। আর যদি তোমরা রুগ্ন হও অথবা সফরে থাক, অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও -অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হাতদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর। (মায়েদাহ/৬)

মূলতঃ ইসলামের সমগ্র কার্য সম্পাদন করার প্রক্রিয়াকে (আহ্‌কাম) বলা হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যেই একটি হচ্ছে ওয়াজিব বিষয়সমূহ এবং নামায হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ওয়াজিব বিষয়। নামায সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা: ১- মুকাদ্দিমাতে নামায (নামাযের প্রাথমিক বিষয়সমূহ) : নামাযী অবশ্যই নামায আদায়ের পূর্বে সেগুলো সম্পাদন করবে। ২- মুকারিনাত (নামায আদায় সংক্রান্ত বিষয়সমূহ): যে বিষয়গুলো নামায আদায়ের জন্য প্রযোজ্য, যেমন: তাকবিরাতুল ইহ্‌রাম থেকে শুরু করে সালাম পর্যন্ত। ৩- মুবতিলাত (নামায বালিত করণ): যে কারণসমূহ নামাযকে বাতিল করে দেয়।

নামাযের প্রাথমিক বিষয়সমূহ

নামাযের সব থেকে প্রাথমিক কাজ হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করা (তাহারাত হাসিল করা)। আর নামাযের জন্য তা দু’পর্যায়ে অর্জন করা প্রয়োজনীয়, যথা:

ক)- তাহারাতে বাতেনি (আভ্যন্তরিণ পবিত্রতা): এটা অর্জনের জন্য কাছদে কুরবাত (আল্লাহ্‌র জন্য আঞ্জাম দিচ্ছি এমন নিয়্যত) করার প্রয়োজন রয়েছে। আর এর সাথে সাথে ওযু, গোসল অথবা তায়াম্মুমের মাধ্যমে তা অর্জিত হয়ে থাকে।

খ)- তাহারাতে যাহেরি (বাহ্যিক পবিত্রতা): যার জন্য কোন কাছদে কুরবাত করার প্রয়োজন নেই। আর তা হচ্ছে শরীর ও পোশাক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র রাখা।

ওযু

সূরা মায়েদার ছয় নং আয়াত অনুযায়ী : নামাযী অবশ্যই নামায আদায়ের আগে ওযু করবে এবং নিজেকে উক্ত কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য তৈরী করবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গোসল করবে, অর্থাৎ সম্পূর্ণ শরীরকে ধুয়ে ফেলবে। আর যখন ওযু অথাব গোসল করতে পারবে না তখন তার পরিবর্তে অবশ্যই তদস্থলে তায়াম্মুম করবে। এই পাঠে এবং আগামী পাঠসমূহে প্রতিটির আহ্‌কাম সম্পর্কে বর্ণনা তুলে ধরা হবে।

ওযুর জন্যে করণীয় বিষয়সমূহ (তাহ্‌রিরুল ওয়াসিলাহ্‌, খণ্ড-১, ফাসলু ফিল ওয়াযু, পৃঃ-২১, ২৩, মাসআলা নং-১,৩,১২):

১- যেসব অঙ্গসমূহ ধোয়া আবশ্যক: ক)- মুখমণ্ডল: লম্বায় হচ্ছে কপালের উপরে যে পর্যন্ত চুল আছে সেখান থেকে থুতনি পর্যন্ত। আর চওড়ায় হচ্ছে বৃদ্ধা আঙ্গুলির মাথা থেকে মধ্য আঙ্গুলির শেষ পর্যন্ত দুরত্বের মধ্যে মুখমণ্ডল যতটুকু আসে। খ)- ডান হাত: কনুই থেকে হাতের আঙ্গুলের শেষ ভাগ পর্যন্ত। গ)- বাম হাত: কনুই থেকে হাতের আঙ্গুলের শেষ ভাগ পর্যন্ত।

২- মাসেহ্‌ করা ক)- মাথা: মাথার প্রথম অংশে যা কপালের উপরে আছে তাতে অন্ততঃ এক আঙ্গুল পর্যন্ত। খ)- ডান পা: অঙ্গুলের মাথা থেকে পায়ের পাতার উচু স্থান পর্যন্ত। গ)- বাম পা: অঙ্গুলের মাথা থেকে পায়ের পাতার উচু স্থান পর্যন্ত।

মুখমণ্ডল ও হাত ধোয়া সংক্রান্ত ওযুর আহ্‌কাম

১- মুখমণ্ডল ও হাত যে পর্যন্ত ধোয়া ওয়াজিব তা আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু যে পর্যন্ত ধোয়া ওয়াজিব তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা হাসিল হয় সে জন্যে অবশ্যই একটু বেশী পরিমান ধোয়া বাঞ্চনীয় (তাহ্‌রিরুল ওয়াসিলাহ্‌, খণ্ড-১, ফাসলু ফিল ওয়াযু, পৃঃ-২১, ২৩, মাসআলা নং-১,২)।

২- শতর্কতামুলক ওয়াজিব হচ্ছে অবশ্যই মুখমণ্ডল ও হাতগুলো উপর থেকে নিচের দিকে ধুতে হবে, আর যদি তা নিচের দিক থেকে উপরের দিকে ধোয়া হয় তবে ওযু বাতির হয়ে যাবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং- ২৪৩)।

৩- যদি কারো মুখমণ্ডল অথবা হাত সাধারণ মুখমণ্ডল অথবা হাতের থেকে ছোট হয়, অথবা কপালে চুল গজিয়ে থাকে অথবা মাথার সামনের দিকে চুল না থাকে তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত অন্যান্য মানুষ যে পরিমানে ধুয়ে থাকে সেই পরিমান ধুলেই যথেষ্ট হবে (তৌযিহুল মাসাযেল, মাসআলা নং-২৩৮)।

৪- যদি কারো মুখমণ্ডল ও হাত সাধারণ মাপের থেকে বড় হয়ে থাকে কিন্তু একটি আরেকটির সম্পূরক তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত যে পরিমান ধোয়া হয়ে থাকে তা অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই, বরং যেরূপে ওযুর নিয়ম বলা হয়েছে সেভাবে ওযু করলেই যথেষ্ট হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৩৮)।

৫- যদি মুখমণ্ডলের চামড়া দাড়ি বা ভ্রুরুর মধ্য থেকে বেরিয়ে থাকে তবে অবশ্যই তাতে পানি পৌছানো আবশ্যক। আর যদি তা বেরিয়ে না থাকে তবে তা ধুলেই যথেষ্ট হবে এবং চমাড়ায় পানি পৌছানোর প্রয়োজন নেই (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৪৩)।

৬- যদি সন্দেহ করা হয় যে, মুখমণ্ডলের চামড়া, দাড়ি বা ভ্রুরুর মধ্য থেকে বেরিয়ে আছে কি না? সেক্ষেত্রে শতর্কতামুলক ওয়াজিব হচ্ছে যে, অবশ্যই তা ধুতে হবে এবং চামড়ায়ও পানি পৌছাতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৪১)।

৭- নাক, মুখ, ঠোটের কিছু অংশ ও চোখ বন্ধ অবস্থায় যা দেয়া যায় না তা ধোয়া ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে অংশগুলো অবশ্যই ধুতে হবে তা সঠিক ভাবে ধোয়া হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে বিশ্বাস অর্জনের জন্য ঐগুলোর কিছু অংশ ধোয়া ওয়াজিব (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৪২)।

৮- ওযুর অংশের চামড়া অথবা মাংস কেটে গিয়ে থাকে- যদি তা সম্পূর্ণ কেটে গিয়ে থাকে তবে অবশ্যই ঐ কাটা অংশের নিচে ধুতে হবে- আর যদি তা সম্পূর্ণ না কেটে গিয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই ধুতে হবে এবং ঐ স্থানের যথটুকুই বাইরে বেরিয়ে আছে তাও ধুতে হবে (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, ফাসলু ফি আফআ’লিল ওযু, পৃঃ-২০৫, মাসআলা নং-১৪)।

৯- পুড়ে যাওয়ার কারণে চামড়ার উপরে যে ফোসকা পড়েছে তা যতদিন পর্যন্ত থাকবে তার উপরে ধোয়াটাই যথেষ্ট হবে। যদিও তা ছিদ্র হয়ে গিয়ে থাকে। আর ফোসকার যে অংশ উঠে গেছে এবং চামড়া বের হয়েছে ততটুকুই ধোয়া যথেষ্ট হবে। তবে বাকি অংশ উঠিয়ে ফেলার বা তার নিচে পানি পৌছানোর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি এমন হয় যে, ফোসকা কখনো চামড়ার সাথে লেগে থাকে আবার কখনো তা লেগে থাকে না তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার নিচেও ধুতে হবে (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, পৃঃ- ২০৬, মাসআলা নং-১৬)।

১০- এমনই চামড়া যা ক্ষতস্থান ভাল হয়ে যাওয়ার জন্য তার উপর লেগে থাকে তা উঠিয়ে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই বা তার উপরিভাগ ধুলেই যথেষ্ট হবে। যদিও তা উঠিয়ে ফেলা সহজ হয়ে থাকে। তবে ক্ষতস্থানের উপর যে ঔষধ লেগে থাকে তা যদি তুলে ফেলা সম্ভব হয় তবে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে। আর যদি তা তুলে ফেলা সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে জাবিরাহ্‌ ওযু করার যে নিয়ম আছে তা প্রযোজ্য হবে। জাবিরাহ্‌ ওযু করার নিয়মাবলী উক্ত অধ্যায়ে আলোচিত হবে (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, পৃঃ-২০৬, মাসআলা নং-১৭)।

১১- ওযুর অংশগুলো ধোয়ার পদ্ধতি ক)- প্রথমবার: ওয়াজিব। খ)- দ্বিতীয়বার: জায়েয। গ)- তৃতীয়বার: বিদয়া’ত বা হারাম।

১২- ধৌত করার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পানি ঢালাই নয় বরং তা পরিপূর্ণভাবে ধোয়ার কথাই প্রকাশ করে। অর্থাৎ যদি একবার পরিপূর্ণভাবে ওযুর নিয়তে সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল অথবা হাত ধোয়া হয় এবং দ্বিতীয়বারও অনুরূপ করে তবে তৃতীয়বার তা করা হারাম হবে। সুতরাং যদি কয়েকবার পানি ঢেলে থাকে এবং ওযুর সমস্ত অংশে পানি না পৌছে থাকে তবে তা একবার ধোয়া হিসাব হবে না। আর যদি একবার পানি ঢালাতেই বা পানি ধম্যে ডুবানোতেই ওযুর সমস্ত অংশে পানি পৌছে থাকে তবে তা একবার ধোয়া হয়েছে হিসাব হবে (ইসতিফতায়াত, খণ্ড-১, পৃঃ-৩৪, প্রশ্নঃ-৩৫)।

১৩- ওযুর অংশগুলো (ওযুর নিয়তে) তিনবার ধৌত করা হারাম বা বিদয়া’ত হওয়া ছাড়াও তা ওযু ভঙ্গের কারণ হয়ে থাকে, কেননা মাসেহ্‌ করাটা ওযুর পানির মাধ্যমে হতে হবে কিন্তু তৃতীয়বার ধোয়ার পরে হাতে লেগে থাকা পানি আর ওযুর পানি বলে গণ্য হয় না। তাই তা দ্বারা মাসেহ্‌ করলে ওযু সঠিক হবে না (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৪৮ ও ইসতিফতায়াত, খণ্ড-১, পৃঃ-৩৪ ও ৩৫)।

মাথা মাসেহ্‌ করা

১- মাসেহ্‌ করার স্থান: মাথার উপরিভাগের চার অংশের এক অংশ (সামনের দিকে)।

২- ওয়াজিব মাসেহ্‌ করার পরিমান: যতটুকু হোক তা যথেষ্ট হবে (এমন পরিমান যে, কেউ বলবে মাসেহ্‌ করেছে)।

৩- এহতিয়াতে মুসতাহাব: চওড়ায় তিন অঙ্গুল এবং লম্বায় এক অঙ্গুল পরিমান।

৪- বাম হাত দিয়ে মাসেহ্‌ করা: জায়েয।

৫- মাথার চামড়ায় মাসেহ্‌ করার প্রয়োজন নেই বরং মাথার প্রথম অংশের চুলের উপর করলেও তা সঠিক হবে। তবে যদি মানুষের মাথার চুল এমন পরিমান বড় হয়ে থাকে যে, তা আচড়ানোর সময় মুখের উপর এসে পড়ে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাথার চামড়ায় মাসেহ্‌ করতে হবে অথাব চুলের গোড়ায়।

৬- মাথার অন্য অংশের চুলের উপর মাসেহ্‌ করা সঠিক হবে না। যদিও তা মাসেহ্‌ করার অংশে এসে জমা হয়ে থাকে।

৭- মাথা মাসেহ্‌ করার সময় এটা প্রয়োজন নেই যে, তা উপর থেকে নিচের দিকে হতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৪৯, ২৫০, ২৫১। তাহ্‌রিরুল ওয়াসিলাহ্‌, খণ্ড-১, ফাসলূ ফিল ওযু, পৃঃ-২৩, মাসআলা নং-১২, ১৩, ১৪)।

পা মাসেহ্‌ করা

১- মাসেহ্‌ করার স্থান: পায়ের উপরিভাগ।

২- ওয়াজিব মাসেহ্‌ করার পরিমান: লম্বায় আঙ্গুলের মাথা থেকে পায়ের পাতার উচু অংশ পর্যন্ত। চওড়ায় যে কোন পরিমান হলেই যথেষ্ট হবে, যদিও তা এক আঙ্গুল পরিমান হয়ে থাকে।

৩- এহতিয়াতে মুসতাহাব: পায়ের পাতার সম্পূর্ণ অংশ।

৪- ডান পাকে অবশ্যই বাম পায়ের আগে মাসেহ্‌ করতে হবে। কিন্তু প্রয়োজন নেই যে, ডান পাকে ডান হাত ও বাম পাকে বাম হাত দিয়েই মাসেহ্‌ করতে হবে (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, ফাসলূ ফি আফআ’লিল ওযু, পৃঃ-২১০)।

মাথা ও পা মাসেহ্‌ করার মাসআলা

১- মাসেহ্‌ করার সময় অবশ্যই হাতকে মাথা ও পায়ের উপর টানতে হবে। আর যদি হাতকে স্থীর রাখে এবং মাথা বা পাকে টেনে আনে তবে সেক্ষেত্রে ওযু বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি হাত টেনে আনার সময় মাথা বা পা সামান্য একটু নাড়ে যায় তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৫৫)।

২- যদি মাসেহ্‌ করার জন্য হাত ভিজা না থাকে তবে বাইরের পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে নিতে পারবে না, বরং ওযুর অন্য অংশ থেকে হাত ভিজিয়ে নিতে হবে এবং তা দিয়েই মাসেহ্‌ করতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৫৭)।

৩- হাত এমন পরিমান ভিজা থাকতে হবে যে, তা দিয়ে মাসেহ্‌ করলে তা মাথা এবং পাকেও ভিজাতে পারে (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, ফাসলূ ফি আফআ’লিল ওযু, পৃঃ-২১২, মাসআলা নং-২৬)।

৪- যদি হাত এমন পরিমান ভিজা থাকে যে, তা দিয়ে শুধুমাত্র মাথা মাসেহ্‌ করা যাবে তবে তা দিয়ে তাই করতে হবে এবং পা মাসেহ্‌ করার জন্য ওযুর অন্য অংশ থেকে পুনরায় হাত ভিজিতে নিতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৫)।

৫- মাসেহ্‌র স্থান (মাথা ও পায়ের পাতা) অবশ্যই শুকনো থাকতে হবে। সুতরাং যদি মাসেহ্‌র স্থান ভিজে থাকে তবে অবশ্যই তা শুখিয়ে নিতে হবে। তবে যদি মাসেহ্‌র স্থান এমন পরিমান ভিজা না থাকে যে, তার উপর মাসেহ্‌ করলে তা বোঝা যাবে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং- ২৬)।

৬- মাসেহ্‌ করার সময় হাত ও মাথা বা পায়ের মধ্যে বোরকা বা টুপি, মোজা বা জুতার মত কিছুর মাধ্যমে দুরত্ব সৃষ্টি না হয় তা যদি অনেক পাতলাও হয় এবং পানি চামড়ায় পৌছাতেও পারে [তবে উপায়হীন অবস্থা ব্যতীত] (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা, নং-২৭)।

৭- মাসেহ্‌র স্থান অবশ্যই পবিত্র থাকতে হবে। যদি নাজিস থাকে এবং তা পানি দিয়ে ধোয়া সম্ভব না হয় তবে তায়াম্মুম করতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৬০)।

এরতেমাসি ওযু

১- এরতেমাসি ওযু এমন যে, মানুষ মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয়কে ওযুর নিয়তে পানির নিচে ডুবিয়ে থাকে এবং ওযুর নিয়তে তা বের করে নিয়ে আসে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৬১)।

২- যেহেতু এরতেমাসি ওযুতেও মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয় অবশ্যই উপর থেকে নিচের দিক ধুতে হবে তাই এই ওযু নিম্নলিখিতভাবে পানির নিচে আঞ্জাম দিতে হবে যথা: ওযুর নিয়তে মুখমণ্ডলকে কপাল হতে অথবা হাতদ্বয়কে কনুই থেকে পানির মধ্যে ডুবাতে হবে, আর যখন সেগুলোকে পানি থেকে উঠিয়ে আনা হবে এবং পানি ঝরে পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ওযুর নিয়তে থাকতে হবে। কেননা যে পানি হাতে অবশিষ্ট থাকবে তা দিয়েই মাসেহ্‌ করতে হবে তাই তা ওযুর পানি হওয়া বাঞ্চনিয়। ওযুর নিয়তবিহীন অবস্থায় মুখমণ্ডল অথবা হাতদ্বয় পানির নিচে নিয়ে যেতে হবে এবং ওযুর নিয়তে তা উঠিয়ে আনতে হবে তবে মুখমণ্ডলকে অবশ্যই প্রথমে কপাল থেকে এবং হাতদ্বয়কে কনুই থেকে উঠিয়ে আনতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৬১ ও ২৬২)।

৩- যদি ওযুর কিছু অংশকে এরতেমাসি এবং কিছু অংশকে অন্য ওযুর পদ্ধতিতে আঞ্জাম দিয়ে থাকে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৬৩)। (এরতেমাসি ওযুতেও পর্যায়ক্রমিকতা বা ধারাবহিকতা রক্ষা করতে হবে; অর্থাৎ মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয়কে এক সঙ্গে পানির নিচে নিয়ে যেতে পারবে না, বরং অবশ্যই প্রথমে মুখমণ্ডল ও তারপর ডান হাত এবং পরে বাম হাত ধুতে হবে)। যে ব্যক্তির হাত অথবা পা কাটা পড়েছে তার ওযু করার পদ্ধতি (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সাক, খন্ড-১, পৃঃ-২০৪, ইসতিফতায়াত, খণ্ড-১,পৃঃ-২৯,৩০,৩১ প্রশ্নঃ- ২০ থেকে ২৪ ও ২৬)

১- হাত কাটা পড়ার ক্ষেত্রে দুই অবস্থা হতে পারে :

ক)- একটি হাত: ১- কনুই এর নিচ থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে যে অংশটুকু বাকি আছে সেটুকুই ধুতে হবে। ২- কনুই এর উপর থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে এই হাত ধোয়ার প্রয়োজন নেই এবং মাথা ও পায়ের মাসেহ্‌ ভাল হাত দিয়ে করতে হবে।

খ)- দুইটি হাত: ১- দুইটিই কনুই এর নিচ থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে যে অংশটুকু বাকি আছে সেটুকুই ধুতে হবে। মাথা ও পায়ের মাসেহ্‌ যদি এই হাতের বাকি অংশ দিয়ে করতে পারে তবে করবে নয়তো কাউকে তা আঞ্জাম দেয়ার জন্য দায়িত্ব প্রদান করবে। ২- দুইটিই কনুই এর উপর থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে হাত ধোয়ার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ধুতে হবে এবং মাথা ও পায়ের মাসেহ্‌ করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। ৩- একটি কনুই এর নিচ থেকে এবং একটি কনুই এর উপর থেকে কাটা পড়েছে অবশিষ্ট থেকে যাওয়া হাতটি ধুতে হবে এবং মাসেহ্‌ ঐ হাত দিয়েই করতে হবে নয়তো কাউকে তা আঞ্জাম দেয়ার জন্য দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।

২- পা কাটা পড়ার ক্ষেত্রেও দুই অবস্থা হতে পারে :

ক)- একটি পা: ১- পায়ের পাতার উচু অংশের নিচ থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে অবশ্যই অবশিষ্ট অংশের উপরে মাসেহ্‌ করতে হবে। ২- পায়ের পাতার উচু অংশের উপর থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে এই পায়ের উপর মাসেহ্‌ করতে হবে না।

খ)- দুইটি পা কাটা পাড়েছে: ১- দুইটিই পায়ের পাতার উচু অংশের নিচ থেকে কাটা পড়েছে এক্ষেত্রে অবশ্যই অবশিষ্ট অংশের উপরে মাসেহ্‌ করতে হবে। ২- দুইটিই পায়ের পাতার উচু অংশের উপর থেকে কাটা পড়েছে সেক্ষেত্রে পায়ের মাসেহ্‌ করার প্রয়োজন নেই। এমন ব্যক্তির ওযু শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্‌ করা। ৩- একটি পায়ের পাতার উচু অংশের নিচ থেকে এবং অপরটি উচু অংশের উপর থেকে কাটা পড়েছে অবশিষ্ট অংশের উপর অবশ্যই মাসেহ্‌ করতে হবে এবং অন্য পায়ের মাসেহ্‌ করতে হবে না।

৩- হাত ও পা কাটা পড়ার ক্ষেত্রেও দুই অবস্থা হতে পারে :

ক)- ওযুর অংশ হাত ও পা অবশিষ্ট নেই (হাতদ্বয় কনুই এর উপর থেকে ও পাদ্বয় পায়ের পাতার উচু অংশের উপর থেকে কাটা পড়েছে) সেক্ষেত্রে হাতদ্বয় ধোয় ও পাদ্বয়ের উপর মাসেহ্‌ করার প্রয়োজন নেই। এমন ব্যক্তি অবশ্যই মুখমণ্ডল ধৌত করবে এবং মাথার মাসেহ্‌ করার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করবে।

খ)- ওযুর অংশ হাত অথবা পায়ের কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে, সেক্ষেত্রে হাতের অবশিষ্ট অংশ অবশ্যই ধৌত করতে হবে এবং পায়ের অবশিষ্ট অংশের উপর মাসেহ্‌ করতে হবে। আর যে ক্ষেত্র গুলোকে নিজে ওযু করতে পারবে না সে সকল ক্ষেত্রে সেগুলো আঞ্জাম দেয়ার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। ওযুর শর্তাবলী নিম্নলিখিত শর্তাবলীতে ওযু সঠিক হবে এবং যে কোন একটি বাদ পড়লে বা ভুল হলে ওযু বাতিল হয়ে যাবে।

ওযুর শর্তাবলী

১- ওযুর পানি ও পাত্রের শর্তবালী: ক)- ওযুর পানি পাক হতে হবে। খ)- ওযুর পানি মুবাহ্‌ হতে হবে (গাছবী নয়)। গ)- ওযুর পানি মুতলাক হতে হবে (মুযায়াফ নয়)। ঘ)- ওযুর পানির পাত্র মুবাহ্‌ হতে হবে। ঙ)- ওযুর পানির পাত্র স্বর্ণ বা রৌপের না হয়।

২- ওযুর অংশের শর্তাবলী: ক)- পাক হতে হবে। খ)- পানি পৌছানোর ক্ষেত্রে যেন কোন বাধা না থাকে।

৩- ওযু পদ্ধতিগত শর্তাবলী: ক)- ধারাবহিকতা রক্ষা করা (যেভাবে ওযুর আমল সম্পর্কিত অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে)। খ)- মুওয়ালাত রক্ষা করা (ওযুর আলম আঞ্জাম দেয়ার মধ্যে যেন কোন দুরত্ব সৃষ্টি না হয়)। গ)- নিজে আঞ্জাম দিতে হবে (অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া যাবে না)।

৪- যে ব্যক্তি ওযু করবে তার শর্তাবলী: ক)- পানি ব্যবহার করাতে যেন তার কোন সমস্যা না থাকে। খ)- আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে ওযু করতে হবে (রিয়া না হয়)।

ওযুর কিছু দোয়া

মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় পড়া মুসতাহাব:

اللَّهُمَّ بَيِّضْ وَجْهي يومَ تَسْوَدُّ فيهِ الوُجوهُ ولا تُسَوِّدْ وَجْهي يوْمَ
تَبْيضُّ فيهِ الوُجُوهُ.
 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বাইয়িদ ওয়াজহি ইয়াওমা তাসওয়াদদু ফিহিল উজুহ ওয়া লা তুসাওয়িদ ওয়াজহি ইয়াওমা তাবয়াদদু ফিহিল উজুহ।

অনুবাদ: হে আল্লাহ কেয়ামতের দির যখন অধিকাংশ মানুষের চেহারা কালো হয়ে যাবে সেদিন আমার চেহারা উজ্জল করো। যেদিন চেহারা সমূহ উজ্জল হবে সেদিন আমার চেহারা অনুজ্জল করোনা।

 

ডান হাত ধোয়ার সময় এই দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব:

 

اللّهُمَّ أَعْطِني كتابي بِيميني وَالخُلْدَ في الْجِنانِ بِيسارِي وَحاسِبْني حِساباً يسيراً.
 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ’তিনী কিতাবি বি ইয়ামিনি ওয়াল খুলদা ফিল জিনানি বি ইয়াসারি ওয়া হাসিবনি হিসাবাই ইয়াসিরা

অনুবাদ: হে আল্লাহু কেয়ামতের দিবসে আমার আমল নামা ডান হাতে দিয়ো, চিরস্থায়ী বেহেশত সহযেই প্রদান করিও এবং সেদিন আমার হিসাব সহজ করে দিয়ো।

বাম হাত ধোয়ার সময় এই দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব:

اللّهُمَّ لاå تُعْطني كتابي بِشِماåلي وَلاå تَجْعَلهاå مَغلُولةً إلى عُنُقي.
 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তু’তিনি কিতাবি বি শিমালি, ওয়া লা তাজআলহা মাগলুলাতান ইলা উনুকি।

অনুবাদ: হে আল্লাহু আমার আমলনামা বাম হাতে দিয়ো না এবং আমার এই হাতকে সেদিন গ্রীবাদেশে জিঞ্জিরাবদ্ধ করো না (অপমানিত করো না)।

মাথা মাসেহ করার সময় নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়ার মুস্তাহাব:

اللّهُمَّ غَشِّني بِرَحمَتِك وَبركاتِك وَعَفْوِك.
 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা গাশশিনী বি রাহমাতিকা ওয়া বারাকাতিকা ওয়া আফয়িক।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার রহমত, বরকত ও ক্ষমার মধ্যে ডুবিয়ে রাখ।

পা মাসেহ করার সময় এই দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব:

اللّهُمَّ ثَبّتْني عَلىå الصّراطِ يومَ تَزِلّ فيهِ الأقدام وَاجْعَل سَعْيي فِيما يرْضيك عَنّي.

 

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিতনী আলাস সিরাতি ইয়াওমা তাযিল্লু ফিহিল আকদাম, ওয়াজয়া’ল সা,য়ি ফিমা ইউরদীকা আন্নি।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! কেয়ামতের দিন আমাকে পুল সিরাতের উপর সুদৃঢ় রেখো যেখানে পা সমূহ কাঁপতে থাকবে। আর আমার চেষ্টা-সাধনাকে সেদিকে নিবদ্ধ কর যাতে তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক।

 

ওযুর শর্তাবলীর আহ্‌কাম

ওযুর পানির আহ্‌কাম

১- মিশ্রিত ও অপবিত্র পানি দিয়ে ওযু করলে তা বাতিল হবে, তা জানা থাক বা না থাক অথাব ভুলে গেলেও (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৬৫)।

২- ওযুর পানি অবশ্যই মুবাহ্‌ হতে হবে। সুতরাং নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ওযু বাতিল হবে যথা: - এমন পানি দিয়ে ওযু করা যার মালিক রাজি নয় (মালিকের রাজি না থাকাটা পরিস্কার হতে হবে)। - এমন পানি যার মালিক আদৌ রাজি আছে কি না তা জানা নেই। - এমন পানি যা কিছু বিশেষ লোকের জন্য ওয়াক্‌ফ করা হয়েছে। যেমন, মাদ্রাসার হাউজের পানি এবং কোন কোন হোটেলের ওযু খানা ও ... (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, ফাসলূ ফিশ শারায়েতিল ওযু, পৃঃ-২৯১-২২৫, মাসআলা নং-৬,৭,৮, তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৬৫)।

৩- বড় বড় পুকুরে ওযু করা, যদিও মানুষের জানা না থাকে সেগুলোর মালিকগণ রাজি আছে না নেই তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সেগুলোর মালিকগণ যদি তাতে ওযু করায় বাধা দেয় তবে এহতিয়াতে ওয়াজিব হচ্ছে ঐ পুকুর গুলোতে ওযু না করা (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৭১)।

ওযুর অংশের শর্তাবলী

১- ওযুর অংশগুলো ওযু ও মাসেহ্‌ করার সময় পাক থাকতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, ওযুর শর্তাবলী, পৃঃ-৩৫, ৬ষ্ঠ শর্ত ও মাসআলা নং-২৭৬,২৭৭)।

২- যদি ওযুর মধ্যে যে জায়গাগুলোকে ধৌত ও মাসেহ্‌ করেছে তা নাজিস হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ওযু সঠিক হবে। উদাহরণ স্বরূপ হাত ধোয়ার কাজে ব্যস্ত আছে এমন সময় মুখমণ্ডল নাজিস হয়ে যায় (তৌযিহুল মাসায়েল, ওযুর শর্তাবলী, পৃঃ-৩৫, ৬ষ্ঠ শর্ত ও মাসআলা নং-২৭৬,২৭৭)।

৩- যদি ওযুর অংশ ব্যতীত শরীরের অন্য কোন অংশ নাজিস থাকে সেক্ষেত্রে ওযু সঠিক হবে। কিন্তু যদি মলদ্বার ও প্রস্রাবের স্থান পরিস্কার না করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে তা আগে পরিস্কার করার পর ওযু করতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, ওযুর শর্তাবলী, পৃঃ-৩৫, ৬ষ্ঠ শর্ত ও মাসআলা নং-২৭৬,২৭৭)।

৪- যদি নখের নিচে ময়লা থাকে সেক্ষেত্রে ওযু করাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সাধারণ পরিমানের থেকে নখ বেশী বড় হয়ে থাকে তবে তার নিচে জমা ময়লা পরিস্কার করে নিতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৯১)।

৫- শরীরের ময়লা যদি ওযুর অংশে পানি পৌছাতে বাধা সৃষ্টি করে তবে তা ওযুতে কোন সমস্যা নেই (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৯৪)।

৬- যদি চক পাউডার দিয়ে প্লাষ্টারের কাজ সম্পাদন করার পর অথবা অনুরূপ কোন কাজের পরে সাদা পদার্থের মত কিছু যা চামড়ায় পানি পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করে না হাতে থেকে যায় তবে তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে যদি চামড়ায় পানি পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করে অথবা সন্দেহের সৃষ্টি হয় যে, তা চামড়ায় পানি পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করবে কি না তবে অবশ্যই তা পরিস্কার করতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৯৪)।

৭- যদি ওযুর অংশের (যে অংশগুলো ধুতে হয়) উপর এমন কেন কিছু থাকে যা চামড়ায় পানি পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করে ওযুর জন্য তা অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে। আর যদি মাসেহ্‌ করার স্থানে এমন কোন কিছু থাকে যা পানি পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করে না তবুও তা অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে (তৌযিহুল মাসায়ের, ওযুর শর্তাবলী, ১৩ নং শর্ত ও মাসআলা, নং-২৫৯)।

৮- বল পয়েন্ট কলমের দাগ, রঙ্গের ফোটা, চর্বি ও ক্রীম জাতিয় কিছু তবে যদি রঙ জড়দেহ ব্যতীত হয় তা ওযুর জন্য বাধার সৃষ্টি করবে না। কিন্তু যদি জড়দেহ তাতে থেকে থাকে (চামড়ার উপরে আটকে থাকে) অবশ্যই তা পরিস্কার করতে হবে (ইসতিফতায়াত, খণ্ড-১, পৃঃ-৩৬, ৩৭, প্রশ্ন নং-৪০ থেকে ৪৫)।

৯- যে উল্কি আকা সমূহ চামড়ার নিচে অবস্থান করে (কলমের কালি বিশেষ হয়) এবং চামড়ায় পানি পৌছাতে কোন বাধার সৃষ্টি করে না তা থাকতে ওযুর

জন্য কোন সমস্যা নেই (ইসতিফতায়াত, খণ্ড-১, পৃঃ-৩৬, ৩৭, প্রশ্ন নং-৪০ থেকে ৪৫)।

ওযুর পদ্ধতির শর্তাবলী

১-তারতিব (ধারাবাহিকতা),

২- মুওয়ালাত (পর পর আঞ্জাম দেয়া)

৩- অন্যের কাছ থেকে সাহায্য না নেয়া

ওযুর ক্ষেত্রে করণীয় কাজসমূহ অবশ্যই নিম্নলিখিত ভাবে আঞ্জাম দিতে হবে:

১- তারতিব (ধারাবাহিকতা), ওযুর ক্ষেত্রে করণীয় কাজসমূহ অবশ্যই নিম্নলিখিত ভাবে আঞ্জাম দিতে হবে: ক)- প্রতমে মুখমণ্ডল ধৌত করা। খ)- তারপর ডান হাত ধৌত করা। গ)- অতঃপর বাম হাত ধৌত করা। ঘ)- অতঃপর মাথা মাসেহ্‌ করা। ঙ)- অতঃপর ডান পায়ে মাসেহ্‌ করা। চ)- এবং সবশেষে বাম পায়ে মাসেহ্‌ করা। যদি ওযুর ক্ষেত্রে করণীয় কাজসমূহ অর্থাৎ তারতিব বা ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যায় তবে ওযু বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি যদি ডান ও বাম পায়ের মাসেহ্‌ও এক সঙ্গে করা হয়।

২- মুওয়ালাত (পর পর আঞ্জাম দেয়া): ক- মুওয়ালাত হচ্ছে পর পর আঞ্জাম দেয়া, অর্থাৎ ওযুর আমলের মধ্যে যেন কোন দুরত্ব সৃষ্টি না হয়। খ- যদি ওযুর করণীয় কাজ গুলির মধ্যে এতটাই দুরত্বের সৃষ্টি হয় যে, যখন ওযুর অন্য কোন অংশকে ধুতে বা মাসেহ্‌ করতে গেলে দেখা যাবে পূর্বে ধোয়া বা মাসেহ্‌ করা স্থান শুখিয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ওযু বাতিল হবে। কিন্তু যদি যে স্থান পরবর্তীতে ধুবে বা মাসেহ্‌ করবে তার সিক্ততা শুখিয়ে যেয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ওযু সঠিক হবে (তাহ্‌রিরুল ওয়াছিলাহ্‌, খণ্ড-১, ফাছলু ফি সারায়েতিল ওযু, পৃঃ-২৮)। গ- ওযু করার সময় হাটা বা চলা-ফেরা করাতে কোন সমস্যা নেই। সুতরাং যদি মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত করার পর কয়েক কদম হেটে যায় (যতটুকু গেলে মুওয়ালাত নষ্ট হয়ে যায় না) এবং পরে মাথা ও পায়ের মাসেহ্‌ করে তবে সেক্ষেত্রে ওযু সঠিক হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৮৫)।

৩- অন্যের কাছ থেকে সাহায্য না নেয়া: ক- যে ব্যক্তি ওযুর আমলসমূহ নিজেই আঞ্জাম দিতে পারে সে যেন অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্য না নেয়। সুতরাং যদি অন্য ব্যক্তি ওযু করা ব্যক্তির মুখ ও হাত ধুয়ে দেয় এবং মাসেহ্‌ করিয়ে দেয় তবে সেক্ষেত্রে ওযু বাতিল হবে। কিন্তু যদি অন্য ব্যক্তি ওযু করা ব্যক্তির হাতে পানি ঢেলে দেয় এবং ব্যক্তি নিজেই নিজের ওযুর অংশগুলোর উপর পানি দিয়ে ধৌত করে তবে সেক্ষেত্রে ওযু বাতিল হবে না। তবে প্রকৃতপক্ষে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নেয়াটা হচ্ছে মাকরুহ (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, ফি সারায়েতিল ওযু, আত্তাসেয়া’, পৃঃ-২৩৪)। খ- যে ব্যক্তির পক্ষে ওযু করা সম্ভব নয়, সে অবশ্যই তা আঞ্জাম দেয়ার জন্য কাউকে দায়িত্ব প্রদান করবে। সেক্ষেত্রে ঐ দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি এ কাজের জন্য অর্থ চায় তবে তা তাকে দিবে। কিন্তু অবশ্যই ওযুর নিয়ত নিজেকে করতে হবে (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৮৬)। গ- যে ব্যক্তি ওযুর জন্য অন্যের সাহায্য নিয়ে থাকে সে ওযুর যে কয়টি আমল নিজেই করতে পারবে তা একাই আঞ্জাম দিবে, সে সকল ক্ষেত্রে অন্যে সাহায্য যেন না নেই (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৮৭)। ঘ- যে ব্যক্তি অন্যকে ওযু করিয়ে থাকে মাসেহ্‌ করানোর সময় সে যেন ঐ ব্যক্তির হাত মাথা ও পায়ের উপর টানে। তবে যদি তা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির হাত থেকে সিক্ততা নিজের হাতে লাগিয়ে নিজের হাতকে মাসেহ্‌ করার স্থানে টানে। আর যদি সম্ভব হয় তবে এহতিয়াতে ওয়াজিব হচ্ছে তায়ম্মুও আঞ্জাম দেয় (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৮৬)।

ওজুকারির শর্তাবলী

১- যে ব্যক্তি জানে যে, ওযু করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে অথবা ভয় পাচ্ছে যে, অসুস্থ হয়ে পড়বে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সে তায়ম্মুম করবে। কেননা যাদি সে ওযু করে তবে তা বাতিল হবে। কিন্তু যদি না জানে যে, পানির ব্যবহার তার জন্য ক্ষতি হতে পারে ও ওযু করে এবং পরে বুঝতে পারে যে, ক্ষতি হয়েছে তবে সেক্ষেত্রে তার ওযু সঠিক হবে (আল্‌ উরওয়াতুল উ’সকা, খণ্ড-১, ফি সারায়েতিল ওযু, আস্‌সাবেয়া’ পৃঃ-২৩২, তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৮৮, ৬৭২)।

২- ওযু অবশ্যই কাসদে কুরবাত আঞ্জাম দিতে হবে, অর্থাৎ আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন করার উদ্দেশ্যে ওযু করবে (তৌযিহুল মাসায়েল, ওযুর শর্তাবলী, ৮নং শত )।

৩- নিয়ত মুখে বলার দরকার নেই অথাব নিজের অন্তরে বলবে বরং এতটুকুই যথেষ্ট যে, তার জানা থাকতে হবে সে ওযু করছে। এমনই যে, তাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে কি করছো? বলবে, ওযু করছি (তৌযিহুল মাসায়েল, মাসআলা নং-২৮২)।

৪- ওযুতে শুধুমাত্র কাসদে কুরবাত করাই যথেষ্ট হবে বা প্রয়োজন নেই যে, উজুব ও ইসতিহ্‌বাব নিয়ত করবে অর্থাৎ ওয়াজিব বা মুসতাহাব নিয়ত করার প্রয়োজন নেই (তাহরিরুল ওয়াসায়েল, খণ্ড-১, পৃঃ-২৯, মাসআলা নং-২০)।