ওয়াজিব গোসল

মানুষের জন্য ওয়াজিব গোসল সমূহ সাত প্রকার :

১। জুনুব অবস্থা হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল।

২। হায়েয বা ঋতুর গোসল।

৩। নিফাসের গোসল।

৪। ইসতিহাযা বা রক্তক্ষরণের গোসল।

৫। মৃতের গোসল।

৬। মৃতদেহ স্পর্শের গোসল এবং

৭। মানত বা অঙ্গীকার ও কসম করার কারণে গোসল।

জানাবাতের গোসল বিষয়ক আহকাম

মাসআলা: ৩৪৪- মানুষ দু’ভাবে জুনুব হয়ে থাকে :

১। সঙ্গম দ্বারা ও ২। বীর্য (শুক্র বা ধাতু) নির্গত হলে (ধাতু বিভিন্নভাবে নির্গত হতে পারে) চাই নিদ্রাবস্থায় হোক অথবা জাগ্রতাবস্থায়, পরিমাণে ¯^í হোক অথবা বেশি, উত্তেজনার সাথে হোক অথবা উত্তেজনা ছাড়া, ইচ্ছাকৃত হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত; এসবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

মাসআলা: ৩৪৫- যদি কারো শরীর থেকে কিছু তরল জিনিস বের হয়, কিন্তু সে জানে না যে, এটা কি বীর্য না প্রস্রাব অথবা অন্য কিছু; তাহলে যদি উত্তেজনার সাথে ও উছলে বের হয় এবং বেরিয়ে আসার পর শরীর দূর্বল হয়, তাহলে সে তরল বস্তুকে বীর্য ধরে নিতে হবে; নতুবা নয়।[1] কিন্তু রুগীর জন্য এটা জরুরী নয় যে, তা উছলে বের হবে এবং তারপর শরীর দূর্বল হবে, বরং উত্তেজনার সাথে বেরিয়ে এলেই বীর্য বলে গণ্য করা হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসআলা এরূপ : তারা যখন যৌন সঙ্গমের বাসনায় পুরোপুরিভাবে উত্তেজিত হয়; তখন যে তরল পদার্থ বের হয় এবং যা দ্বারা পোশাক মেখে যায়, তা ধাতু নির্গমন বলে গণ্য করা হবে; শুধু এরূপ তরল পদার্থ জুনুবের মধ্যে পরিগণিত হবে। এর বাইরে যা বের হয় তার সবই পাক। যেমন, সঙ্গমের পূর্বে খেলাকরা বা সঙ্গমের কল্পনার কারণে যে তরল পদার্থ বের হয়, তা পাক। তার জন্য গোসল আবশ্যক নয়।

মাসআলা: ৩৪৬- সুস্থ পুরুষ লোকের যদি উপরে বর্ণিত তিনটি আলামতের যেকোন একটি দেখা যায় এবং অন্য দু’টি আলামত দেখা যাবার ব্যাপারে যদি নিশ্চিত না হওয়া যায়, তখন গোসল করতে হবে না। তার পূর্বে অযু করা থাকলে তা দিয়েই সে নামায পড়তে পারবে। নতুবা শুধু অযু করতে হবে।

মাসআলা: ৩৪৭- বীর্য বের হবার পরে প্রস্রাব করা মুস্তাহাব। আর প্রস্রাব করার পর যদি গোসল করা হয় এবং গোসলের পর যদি কোন তরল জিনিস বেরিয়ে আসে এবং জানা না থাকে যে, এটা কি বীর্য না পেশাব বা অন্য কোন তরল জিনিস, তাহলে তা পাক বলে গণ্য হবে।[2]

মাসআলা: ৩৪৮- কেউ যখন কোন মহিলার সাথে সঙ্গম করে এবং খাতনা করার স্থান পর্যনত্ম বা তার বেশি লিঙ্গ প্রবেশ করে, তাহলে উভয়েই জুনুব হবে। সে সঙ্গম মহিলার সামনে দিয়ে হোক বা পিছন দিয়ে হোক; সে মহিলা বালেগ হোক বা নাবালেগ হোক; বীর্য বা ধাতু বের হোক বা না হোক কোন পার্থক্য নেই।

মাসআলা: ৩৪৯- যদি সন্দেহ হয় যে, খাতনা করার স্থান পর্যনত্ম লিঙ্গ প্রবেশ করেছে নাকি করে নি তাহলে গোসল করা ওয়াজিব নয়।

মাসআলা: ৩৫০- যদি কেউ পশুর সাথে সঙ্গম করে; নাউযু বিল্লা­হ! তখন যদি বীর্য বের হয় তাহলে শুধু গোসল করাই যথেষ্ট। আর যদি বীর্য বের না হয় তাহলে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে গোসল ও অযু উভয়টি করতে হবে। যদি অযু করা থাকে তাহলে শুধু গোসল করতে হবে। কোন পুরুষ বা বাচ্চা ছেলের সাথে সঙ্গমের ক্ষেত্রেও একই হুকুম বলবৎ থাকবে।

মাসআলা: ৩৫১- সঙ্গম করার পূর্বে যদি কোন কারণে বীর্য চলাচল করে কিন্তু বের না হয়, তাহলে গোসল ওয়াজিব নয়।

মাসআলা: ৩৫২- যে ব্যক্তি গোসল করতে সক্ষম নয়, কিন্তু তায়াম্মুম করতে সক্ষম তার সাথে সাধারণ মানুষের কোন পার্থক্য নেই। নামাযের সময় হবার পরও সে তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে পারবে।

মাসআলা: ৩৫৩- কেউ যখন তার পোশাকে বীর্য বা ধাতুর আলামত দেখতে পায় এবং নিশ্চিত হয় যে, তা তার নিজের বীর্য ছিল; তাহলে গোসল করতে হবে এবং সে অবস্থায় যত নামায পড়েছে সবই পুনরায় পড়তে হবে। তবে পূর্বের পড়া নামায যাতে সে সম্ভাবনা দেয় যে, তা উক্ত বীর্য বের হবার আগে পড়েছিল তা পুনরায় পড়তে হবে না।

জুনুব ব্যক্তির জন্য হারাম কাজ সমূহ

মাসআলা: ৩৫৪- জুনুব ব্যক্তির জন্য পাঁচটি কাজ হারাম :

১। শরীরের কোন অংশ কোরআনের হরফ সমূহের সাথে, মহান আল্লাহর নামের সাথে, নবী-রাসূলগণের নামের সাথে, মাসুম বা নিষ্পাপ ইমামগণের নামের সাথে এবং হযরত ফাতেমা যাহ্‌রা (আঃ)’র নামের সাথে স্পর্শ করা।

২। মসজিদুল হারাম তথা কা’বা শরিফ এবং মাসজিদে নববীতে প্রবেশ করা; যদিও এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া হয়।

৩। সাধারণ মসজিদসমূহে অবস্থান গ্রহণ। যদি কেউ এসব মসজিদের এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় অথবা মসজিদের ভিতর থেকে কোন জিনিস আনার জন্য প্রবেশ করে তাহলে তা হারাম নয়। এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে মাসুম ইমামগণের মাযার সমূহ এ হুকুমের মধ্যে শামিল হবে।

৪। কোন বস্তু মসজিদে রাখার উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করা, এমনকি এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে বাহির থেকে কোন জিনিস মসজিদে রাখাও জুনুব ব্যক্তির জন্য হারাম। অনুরূপভাবে অতিক্রম করার সময় বা চলাকালেও কোন বস্তু মসজিদে রাখা যাবে না।

৫। কোরআনের সেসব সূরা পাঠ করা (হারাম) যেগুলোতে ওয়াজিব সেজদা রয়েছে। আর তা চারটি সূরা যথা : ১। সূরা আলিফ লাম মীম তানযীল (সূরা সেজদাহ্‌), ২। সূরা হা-মীম সেজদাহ্‌ (সূরা ফুসসিলাত), ৩। সূরা আন নাজম ও ৪। সূরা ইকরা বিইসমি।

জুনুব ব্যক্তির জন্য মাকরুহ কাজ সমূহ

মাসআলা: ৩৫৫- জুনুব ব্যক্তির জন্য নয়টি কাজ মাকরুহ :

১,২। খাওয়া ও পান করা।

৩। ওয়াজিব সেজদার আয়াত ব্যতীত অন্য স্থান থেকে ৭টি আয়াতের বেশি তেলাওয়াত করা।

৪। কোরআনের কভার, পাদটিকা এবং দু’লাইনের মাঝে স্পর্শ করা।

৫। কোরআন সাথে রাখা।

৬। ঘুমানো, তবে ঘুমানোর আগে অযু বা তায়াম্মুম করলে মাকরুহ হবে না।

৭। মেহেদি দ্বারা খেজাব করা।

৮। শরীরে তৈল মাখা এবং

৯। ঘুমের মধ্যে ধাতু নির্গত হলে তারপর সঙ্গম করা।

জানাবাতের গোসল

মাসআলা: ৩৫৬- কয়েকটি কাজের জন্য জানাবাতের গোসল করা ওয়াজিব : ওয়াজিব ও মুস্তাহাব নামায সমূহের জন্য গোসল করা ওয়াজিব; কিন্তু জানাযার নামায, সাহু সেজদার জন্য ও তিলাওয়াতের সেজদার জন্য গোসল করা ওয়াজিব নয়।[3]

মাসআলা: ৩৫৭- ওয়াজিব গোসলের জন্য ওয়াজিব নিয়ত করা আবশ্যক নয় বরং কাসদে কোরবাত বা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে গোসল করলেই যথেষ্ট।

মাসআলা: ৩৫৮- নামাযের সময় নিশ্চিত হবার পর কেউ যদি ওয়াজিব গোসল করে এবং গোসলের পর বুঝতে পারে যে, নামাযের সময় হবার আগে সে গোসল করেছিল তাহলে সে গোসলও সহীহ ও সঠিক।

মাসআলা: ৩৫৯- জানাবাতের গোসল দুইভাবে করা যেতে পারে। ক- তারতিবী বা ধারাবাহিক গোসল এবং খ- এরতেমাসী বা ডুব দিয়ে গোসল।

তারতিবী বা ধারাবাহিক গোসল

মাসআলা: ৩৬০ ও ৩৬১- কেউ তারতিবী গোসলের নিয়ত করার পর এহতিয়াতে ওয়াজিব হচ্ছে যে, প্রথমে মাথা ও গর্দান (ঘাড়) ধৌত করবে এবং তারপর দেহ; তারপর শরীরের ডান দিক এবং তারপর বামদিক ধৌত করা উত্তম। পানির নীচে ডুব দিয়ে উল্লে­খিত তিন অঙ্গ ঝাঁকানোর সাথে যদি তারতিবী গোসলের নিয়ত করা হয় এহতিয়াতের ভিত্তিতে তা যথেষ্ট নয়। অনুরূপভাবে এহতিয়াতের ভিত্তিতে মাথা পুরোপুরি ধোয়ার আগে শরীর ধুলেও গোসল বাতিল হয়ে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে নতুন করে আবার গোসল শুরু করতে হবে না বরং মাথার বাকি অংশ ধুয়ে পুনরায় দেহ ধুলেই যথেষ্ট এবং তখন গোসল সহীহ হবে।

মাসআলা: ৩৬২- নিশ্চিত হবার জন্য প্রত্যেকটি অঙ্গ ধোয়ার সময় একটু অতিরিক্ত অংশ ধোয়া আবশ্যক।

মাসআলা: ৩৬৩- গোসল করার পর যদি বুঝা যায় যে, দেহের কোন অংশ ধোয়া হয় নি, কিন্তু যদি তার স্থান সনাক্ত করা না যায়, তবে নতুন করে মাথা ধোয়ার প্রয়োজন নেই; শুধু যতটুকুর জন্য সন্দেহ হয়েছে যে তা ধোয়া হয় নি; শুধু ততটুকু ধুতে হবে।

মাসআলা: ৩৬৪- গোসল করার পর যদি বুঝা যায় যে, যে স্থান ধোয়া হয় নি, যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সে স্থান দেহের ডান পাশে ছিল তাহলে এহতিয়াতে মুস্তাহাব  হল সে স্থান ধোয়ার পর দেহের বাম অংশও ধুতে হবে; যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সে স্থান দেহের বাম পাশে ছিল তাহলে শুধু সে স্থান ধুলেই যথেষ্ট হবে; আর যদি সে স্থান মাথা বা গলায় হয় তাহলে এহতিয়াতে ওয়াজিব হল সে স্থান ধোয়ার পর দেহ পুনরায় ধুতে হবে।

মাসআলা: ৩৬৫- গোসল শেষ হবার আগে যদি সন্দেহ হয় যে, দেহের কোন অংশ ধোয়া হয় নি, তাহলে সে অংশ ধুতে হবে। আর যদি সে সন্দেহমূলক স্থান মাথা বা গলায় হয়, তাহলে GnwZqvZ¯^iƒc সে অংশ ধোয়ার পর দেহের ডান ও বাম অংশ ধোয়া আবশ্যক।

এরতিমাসী বা ডুব দিয়ে গোসল

এরতিমাসী গোসল দু’ভাবে করা যেতে পারে : “এক ডুবে” ও “কয়েক ডুবে”।

মাসআলা: ৩৬৬- এক ডুব দিয়ে গোসল করার নিয়ম হচ্ছে যে, নিয়ত করে সমসত্ম শরীরকে একবারেই পানিতে ডুবিয়ে দিতে হবে। পানিতে ডুব দেয়ার আগে নিয়ত করা জরুরী নয়। বরং দেহের কিছু অংশ ডুবিয়ে নিয়ত করার পর পুরো শরীর পানিতে ডুবালেই যথেষ্ট।

মাসআলা: ৩৬৭- এরতিমাসী তাদরীজী গোসল (ইরতিমাসী পর্যায়ক্রমিক গোসল)-এর ক্ষেত্রে অবশ্যই গোসলের নিয়তে (সাধারণ একত্ব রড়্গার লড়্গ্যে) শরীরকে µgvš^‡q পানির মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। আর এ অংশে জরুরী হচ্ছে যে, প্রতি অঙ্গ পানিতে ধৌত করার পূর্বে তা বাইরে থাকবে ও তারপর ডুব দিতে হবে।

মাসআলা: ৩৬৮- এরতেমাসী গোসল করার পর কেউ যদি বুঝতে পারে যে, দেহের কোন এক স্থানে পানি পৌঁছে নি; সে স্থান সম্পর্কে জানা থাকুক বা না থাকুক পুনরায় গোসল করতে হবে।

মাসআলা: ৩৬৯- যদি এমন হয় যে, তারতিবী গোসল করার সময় হাতে নেই; কিন্তু এরতেমাসী গোসল করার সময় আছে, তাহলে অবশ্যই এরতেমাসী গোসল করতে হবে।

মাসআলা: ৩৭০- হজ্ব বা ওমরার জন্য কেউ যখন এহরাম পরিধান করে, সে এরতেমাসী গোসল করতে পারবে না; কিন্তু ভুলবসতঃ করে ফেললে সে গোসল সহীহ হবে।

গোসলের আহকাম

মাসআলা: ৩৭১- এরতেমাসী বা তারতিবী গোসলের পূর্বে শরীর পবিত্র থাকার শর্ত নেই; বরং গোসলের উদ্দেশ্যে পানি ঢাললে বা ডুব দেয়ার ফলে যদি শরীর পবিত্র হয়, তাহলেই যথেষ্ট এবং গোসল হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলে : গোসলের পানি যাতে নাপাক হয়ে না যায়। যেমনশরীর নাপাক থাকা অবস্থায় অল্প পানিতে গোসল করা হলে যেহেতু পানি নাপাক হয়ে যাবে, তাই সে গোসল সহীহ হবে না। কিন্তু কুর পানিতে সেরূপ গোসল করলে শরিয়তি বিধানে অসুবিধা নেই।

মাসআলা: ৩৭২- যে ব্যক্তি হারাম পথে জুনুব হয়েছে, সে যদি গরম পানি দিয়ে গোসল করার কারণে ঘেমে যায়, তাহলেও তার গোসল সহীহ।

মাসআলা: ৩৭৩- গোসল করার সময় যদি দেহের একচুল পরিমাণ স্থানও ধোয়া ছাড়া থাকে, তাহলে গোসল সম্পূর্ণ হবে না। তবে কানের ভিতরের অংশ ও অনুরূপ অংশ ধোয়া ওয়াজিব নয়, কারণ তা দেহের ভিতরের অংশ বলে পরিগণিত হয়।

মাসআলা: ৩৭৪- যে অংশ সম্পর্কে সন্দেহ থাকে যে, তা দেহের ভিতরের অংশ নাকি বাহিরের অংশ তা ধোয়া আবশ্যক।

মাসআলা: ৩৭৫- নাক ও কানের ছিদ্র বা অনুরূপ ছিদ্র যদি তুলনামূলকভাবে বড় হয় এবং সে কারণে যদি তা দেহের বাহিরের অংশ বলে পরিগণিত হয়, তাহলে তা ধোয়া আবশ্যক।

মাসআলা: ৩৭৬- শরীরে যদি এমন কিছু লেগে থাকে যা পানি প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে গোসলের পূর্বে তা দূর করা আবশ্যক। যদি তাতে নিশ্চিত না হয়ে কেউ গোসল করে তাহলে তার গোসল বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

মাসআলা: ৩৭৭- গোসল করার সময় যদি যৌক্তিক সন্দেহ আসে যে, পানি প্রবেশে বাধাদানকারী কিছু শরীরে লেগে আছে, তাহলে পর্যবেক্ষণ করে তা বের করা উচিত।

মাসআলা: ৩৭৮- ছোট চুল গোসলের সময় ধোয়া আবশ্যক, কারণ তা দেহের অংশ হিসেবে পরিগণিত; বড় চুল ধোয়া আবশ্যক নয় বরং শুধু তার নীচের চামড়া ভেজানোই যথেষ্ট। আর যদি বড় চুল না ধোয়ার কারণে চামড়াতে পানি পৌঁছানো সম্ভব না হয়, তাহলে তা ধুতে হবে।

মাসআলা: ৩৭৯- অযু সহীহ হবার জন্য যতগুলো শর্ত বলা হয়েছে, তার মধ্যে দুটি শর্ত ছাড়া বাকি শর্ত গোসলের জন্যও প্রযোজ্য হবে, যে দু’টি শর্ত গোসলের মধ্যে শামিল হবে না তা হল :

ক- উপর থেকে নীচে ধোয়া ও

খ- মোয়ালাত[4]। অতএব গোসলের পানি নীচ থেকে উপরের দিকে দিলেও কোন অসুবিধা নেই এবং তারতিবী গোসলের ক্ষেত্রে এক অংশ ধোয়ার অনেক পরে আরেক অংশ ধুলেও কোন অসুবিধা নেই; এমনকি যদি এক অংশের মধ্য থেকেও যদি আংশিক ধোয়ার অনেক পরে তার অবশিষ্ট অংশ ধোয়া হয় তাতেও শরিয়তি বিধানে অসুবিধা নেই। যেমন যদি মাথা ধোয়ার অনেক পরে ঘাড় ও গলা ধোয়া হয় তাতেও সমস্যা নেই। তবে যে ব্যক্তি তার প্রস্রাব বা পায়খানার বেগ থামিয়ে রাখতে পারে না, তার কর্তব্য হল, ঝামেলা এড়ানোর উদ্দেশ্যে তারাতারি গোসল বা অযু করে নামায পড়া।

মাসআলা: ৩৮০- পয়সা দিয়ে যে গোসলখানায় গোসল করতে হয়, যদি কেউ গোসলখানার মালিককে রাজি না করিয়ে বাকি (নগদ অর্থ না দিয়ে) গোসল করে, তাহলে তার গোসল বাতিল বলে গণ্য হবে, যদিও পরে মালিককে রাজি করানো যায়।

মাসআলা: ৩৮১- গোসলখানার মালিক যদি রাজি থাকে যে, কেউ বাকি (পরে পয়সা দেবে) হিসেবে গোসল করবে; কিন্তু যে ব্যক্তি গোসল করবে তার যদি এমন চিনত্মা থাকে যে, তার পয়সা দেবে না বা দিলেও তা হারাম উপার্জন থেকে দেবে, তাহলেও তার গোসল বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

মাসআলা: ৩৮২- খোমসের অর্থ দিয়ে যদি কেউ গোসল করে তা হারাম হলেও তার গোসল সহীহ এবং উক্ত পয়সার জন্য খোমস পাবার অধিকারীর কাছে গোসলকারী ঋণী থাকবে।

মাসআলা: ৩৮৩- গোসল করা না করার ব্যাপারে কেউ যদি সন্দেহ করে, তাহলে গোসল করতে হবে। কিন্তু যদি গোসলের শেষে সন্দেহ করা হয় যে, গোসল ঠিকমত করা হয়েছে কিনা, তাহলে পুনরায় গোসল করতে হবে না।

মাসআলা: ৩৮৪- গোসলের মাঝখানে যদি কারো প্রস্রাব, পায়খানা বা মলদ্বার দিয়ে বায়ু বের হয় (এগুলোকে হাদাসে আসগার বলা হয়), তাহলে নতুন করে গোসল করার দরকার নেই; বরং গোসল শেষ করা যাবে এবং এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে তারপর শুধু অযু করতে হবে। কিন্তু যদি তারতিরী গোসলকে এরতেমাসী গোসল অথবা এরতেমাসী গোসলকে তারতিবী গোসলে পরিবর্তন করা হয়, তাহলে অযু করারও প্রয়োজন হবে না।

মাসআলা: ৩৮৫- নামাযের সময় সংকীর্ণ হবার কারণে যার কর্তব্য হল তায়াম্মুম করে নামায পড়া, সে ব্যক্তি যদি ধারণা করে যে, গোসল করে নামায পড়ার সময় পাবে এবং তখন নামায পড়ার নিয়তে গোসল শুরু করে; কিন্তু গোসলের পর দেখা গেল যে, নামাযের সময় শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তার গোসল সঠিক; তবে শর্ত হল, ‘কাসদে কোরবাত’[5] করতে হবে।

মাসআলা: ৩৮৬- জুনুব ব্যক্তি নামাযের পর যদি সন্দেহ করে যে, গোসল করেছিল নাকি করে নি, তাহলে যে নামায পড়া হয়েছে তা সহীহ; কিন্তু পরবর্তী নামাযের জন্য গোসল করতে হবে। সে নামাযের পর যদি তার হাদাসে আসগার বের হয়, তাহলে গোসলের সাথে অযুও করতে হবে। আর যদি ঐ নামাযের সময় এখনও থেকে থাকে, তাহলে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে ঐ নামাযও পুনরায় পড়তে হবে।

মাসআলা: ৩৮৭- যার উপর কয়েকটি গোসল ওয়াজিব, সে ব্যক্তি সবগুলো গোসলের নিয়তে একটি গোসল করলেই যথেষ্ট। আর বাহ্যিকভাবে সেগুলোর মধ্য থেকে একটি নির্দিষ্ট করে নিয়ত করলেও যথেষ্ট।

মাসআলা: ৩৮৮- দেহের কোন অংশ যদি কোরআনের আয়াত বা আল্লাহর নাম লিখা থাকে, আর যদি তারতিবী গোসল করতে হয় তাহলে এমন সতর্কতার সহিত গোসল করতে হবে যাতে হাত সেখানে না লাগে। অনুরূপভাবে অযুর ক্ষেত্রেও একই হুকুম এবং এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে আল্লাহর নাম ও কোরআনের আয়াত লিখা থাকলে গোসল বা অযু করার সময় তাতে হাত লাগানো উচিত নয়।[6]

মাসআলা: ৩৮৯- জানাবাতের গোসলের পর নামাযের জন্য অযু করা যাবে না; এমনকি মাঝারি পর্যায়ের ইসতিয়াযার গোসল ছাড়া অন্য কোন গোসলের পরও অযু করতে হবে না। মুস্তাহাব  গোসলের পরও অযু ছাড়াই নামায পড়া যাবে। তবে এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে তখন অযু করা যেতে পারে।