বিয়ের উদ্দেশ্যসমূহ-২

অনুবাদ: আলহাজ্জ ড. মো. আব্দুল কাইউম

সম্পাদক: আলহাজ্জ ড. মো. সামিউল হক

বিয়ে হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন। এর বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ উপকার ও ভূমিকা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

পেরেশানি আশ্রয়হীনতা হতে মুক্তি: যে মানুষ বিয়ে করেননি, তিনি হচ্ছেন নীড়বিহীন কবুতরের মত। বিয়ে-শাদির মাধ্যমে মানুষ নিজের গৃহ, নীড় ও আশ্রয়স্থল খুঁজে পায়। সে জীবনের একজন সঙ্গিনী, সহচরী, গোপনভেদের রক্ষাকারিনী, সমব্যথিনী, প্রতিরক্ষাকারিনী এবং সহযোগিনী লাভ করে।

জৈবিক চাহিদার সন্তুষ্টি লাভ: মানব সত্তার মাঝে জৈবিক চাহিদা, একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও মূল্যবান সহজাত প্রবণতা। একারণে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জন্য স্ত্রীর প্রয়োজন রয়েছে যার নিকট হতে একটি নিরাপদ ও শান্ত পরিবেশে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে উপকৃত হবে ও ¯^v` উপভোগ করবে। লিঙ্গগত সহজাত প্রবণতার সঠিক সন্তুষ্টি একটি প্রাকৃতিক প্রয়োজন এবং তার ডাকে সাড়া দেয়া জরুরি। অন্যথা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নেতিবাচক ফলাফল টেনে আনতে পারে। যারা বিয়ে-শাদি করতে A¯^xK…wZ জানান তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

বংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা: বিয়ে-শাদির ফলে সন্তান-সন্ততির জন্ম হয় যা পারিবারিক ভিত্তি সুদৃঢ় এবং ¯^vgx-¯¿xi প্রশান্তি ও মনোরঞ্জনের কারণ হয়। একারণেই কুরআন ও হাদিসে বিয়ে-শাদির ব্যাপারে বহুবিধ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

  মহান আল্লাহ কুরআনে বলছেন:

         ‚আর আল্লাহর নিদর্শনাদির মধ্যে এই যে, তোমাদের জন্যে তোমাদের নিজেদের শ্রেণী হতেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তাদের সঙ্গে তোমরা আনন্দ উপভোগ করতে পার ও ...।“ [1]

ইসলামের মহান নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন: ইসলামে এমন কোনো ভিত্তিই প্রতিষ্ঠিত হয় নি যা বিবাহ হতে শ্রেয়তর।[2]

     অপর এক স্থানে তিনি বলেন: যে কেউ আমার সুন্নতের অনুসরণ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই বিবাহ করতে হবে। বিবাহের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করবে (এবং মুসলমানদের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটাবে) যাতে আমি কিয়ামত দিবসে তোমাদের আধিক্যতার মাধ্যমে অপর উম্মতদের উপর গর্ব  করতে পারি।[3]

আমিরুল মোমেনিন (আ.) বলেন: তোমরা বিবাহ কর, কেননা তা আল্লাহর রসুলের (সা.) সুন্নত।[4]

   ইমাম রেজা (আ.) বলেন: কেউই এমন কোনো উপকার অর্জন করতে পারে না যা উপযুক্ত স্ত্রী থেকে শ্রেয়তর হতে পারে। স্ত্রী এমনই এক সত্তা, যখন তার দিকে তার ¯^vgx দৃষ্টি দিবে তখন আনন্দিত হবে এবং ¯^vgxi অনুপস্থিতিতে নিজেকে ও ¯^vgxi অর্থকে সংরক্ষণ করবে।[5]

   আমরা এ যাবৎ যা কিছু আলোচনা করলাম তা হল বিবাহের বস্তুগত ও জৈবিক চাহিদা ও উপকার। কেননা পশুরাও এসবের অনেকগুলো দ্বারা উপকৃত হয়ে থাকে। এই ধরনের উপকারসমূহকে, মানুষ হওয়ার দৃষ্টিকোণ হতে মানুষের বিবাহের প্রকৃত উদ্দেশ্য বলা যেতে পারে না। মানুষ এই উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে আসে নি যে, সে কিছু সময় যাবৎ পানাহার করবে, ঘুমাবে এবং যৌন কামনা চরিতার্থ করবে ও ¯^v` উপভোগ করবে; অতঃপর মৃত্যুবরণ করতঃ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। মানুষের পদমর্যাদা, এসব বিষয়ের অনেক ঊর্ধ্বে। আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ আগমন করেছেন যাতে জ্ঞান, সৎকর্ম ও উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে ¯^xq আত্মাকে লালন-পালন করবেন এবং মনুষত্বের পূর্ণতা ও সঠিক পথের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন যাতে বিশ্বের প্রতিপালকের নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। মানুষ এমনই এক সত্তা যিনি আত্মার পরিশুদ্ধতা ও সংশোধন, চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্ব ও উন্নত নৈতিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে এবং খারাপ আচরণসমূহ হতে বিরত থেকে এমনই এক উচ্চস্তরে আসিন হবেন যে, ফেরেস্তারাও সেই স্তরে পৌঁছতে পারে না। মানুষ চিরন্তন এক সত্তা, তিনি এ জগতে এসেছেন যাতে নবিগণের পথনির্দেশনার মাধ্যমে এবং ধর্মীয় আইন-কানুন ও কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নিশ্চিত করেন এবং পরজগতে স্রষ্টার পাশে চিরন্তন আনন্দ ও আরামে জীবন যাপন করতে পারেন।

   সুতরাং, মানুষের বিবাহের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে এই কর্মসূচির মধ্যে অনুসন্ধান করা উচিত। একজন ধার্মিক লোকের বিবাহের উদ্দেশ্য এই হওয়া উচিত যে, তিনি ¯^xq স্ত্রীর সাহায্য ও সহযোগিতায় ¯^xq আত্মাকে পাপ, খারাপ কাজ ও কুচরিত্র হতে বিরত রাখবেন এবং সৎকর্ম ও উন্নত নৈতিক গুণাবলী দ্বারা লালন-পালন করবেন যাতে মানবতা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উচ্চ পর্যায়ে আসিন হতে পারেন। এরূপ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে উপনীত হওয়ার লক্ষে একজন পুরুষের জন্য উপযুক্ত ও ভাল স্ত্রী থাকা জরুরি।

   দুইজন মোমিন যারা বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন করেন তারা সখ্যতা, প্রেম-ভালবাসা, প্রশান্তি ও বৈধ জৈবিক সফলতা লাভ করে থাকেন। ফলে বিচ্যুতি, অবৈধ কামোপভোগ, পাপাচার ও বিপদজনক মাদকাসক্তের কেন্দ্রসমূহে গমন, ভবঘুরেমি ও ধ্বংসকারী নৈশ গল্পগুজবের আসর হতে নিরাপদে থাকবেন। একারণেই, সম্মানিত রসুল ও পবিত্র ইমামগণ (আ.) বিবাহের ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছেন।

   আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন: কেউ বিবাহ করলে সে যেন নিজের অর্ধেক ধর্মকে রক্ষা করল।[6]

   ইমাম সাদেক (আ.) বলেন: অবিবাহিত লোকের সত্তর রাকাত নামাজের চেয়ে বিবাহিত লোকের দুই রাকাত নামাজই উত্তম।[7]

   ধার্মিক ও সফল স্ত্রীর উপস্থিতি, দায়িত্ব বাস্তবায়ন, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব অনুসারে আমল, হারাম ও মকরুসমূহ পরিত্যাগ, উন্নত নৈতিক গুণাবলী দ্বারা সজ্জিত হওয়া এবং দুশ্চরিত্র হতে বিরত থাকার ক্ষেত্রে  অতিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি ¯^vgx ও স্ত্রী উভয়েই ধার্মিক হন এবং প্রতিপালন ও আত্মার পরিশুদ্ধতার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলে এই দুরূহ পথ অতিক্রমের ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতিবন্ধক তো হবেই না, বরং পরস্পরের সহযোগী ও উৎসাহদাতা হয়ে থাকবেন। আল্লাহর পথের একজন মুজাহিদ কি ¯^xq স্ত্রীর অনুমোদন ও সম্মতি ছাড়া যুদ্ধের ময়দানে ভালভাবে যুদ্ধ করতে ও বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারবেন? মানুষ কি নিজ স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া আয়-উপার্জন, জীবিকা অর্জন, শরয়ি ও চারিত্রিক যাবতীয় বিষয়কে মেনে চলতে পারবেন? আর্থিক ওয়াজিব অধিকার প্রদান করতে পারবেন? অপব্যয় ও অপচয় হতে বিরত থেকে ¯^xq জরুরি খরচপাতির অতিরিক্ত অংশকে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে পারবেন?

   ধার্মিক ও মোমিন ব্যক্তি ¯^xq স্ত্রীকে কল্যাণ ও সংশোধনের প্রতি আহ্বান জানান। আর বেপরোয়া ও দুশ্চরিত্রবান লোক ¯^xq স্ত্রীকে পাপাচার ও দুশ্চরিত্রের প্রতি টানে এবং মানবতার পবিত্র উদ্দেশ্য হতে দূরীভূত করে। একারণে ¯^vgx ও স্ত্রীর প্রতি গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে যে, তারা যেন যুগোল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবাহের সময় ইমান, ধার্মিকতা ও চরিত্রকে মৌলিক শর্ত নির্ধারণ করেন।

   ইসলামের সম্মানিত নবি (সা.) বলেন: gwngvwš^Z আল্লাহ বলেন, —আমি যদি কোনো মুসলমান লোকের জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণকে একত্রিত করতে চাই, তাকে একটি বিনয়ী অন্তর, একটি স্মরণকারী জিহ্বা এবং বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণকারী একখানা দেহ দান করি। আর এমন একজন মোমেন স্ত্রী তাকে দান করি, যাকে সে দেখলেই আনন্দিত হয় এবং ¯^vgxi অনুপস্থিতিতে তার মাল ও নিজের আত্মার সংরক্ষণ করে'।[8]

   জনৈক লোক আল্লাহর রসুলকে (সা.) সবিনয়ে বললেন: আমার একজন স্ত্রী রয়েছে, আমি গৃহে প্রবেশকালে সে আমাকে ¯^vMZ জানাতে এগিয়ে আসে, আর আমি গৃহ হতে বাইরে যাবার কালে সে আমাকে বিদায়সম্ভাষণ জানায়। আমাকে দুঃখভারাক্রান্ত দেখলে সে আমার মনোরঞ্জনের জন্যে বলে, —তুমি যদি খাদ্য ও আহারের জন্যে চিন্তা-ভাবনা কর, তাহলে বিষণ্ন হয়ো না'! কেননা, আল্লাহ হচ্ছেন আহারের দায়িত্বশীল। আর যদি পরকালের চিন্তা-ভাবনা কর, তাহলে আল্লাহ যেন তোমার চিন্তা-ভাবনা ও গুরুত্বারোপকে আরও অধিক করেন। তখন আল্লাহর রসুল (সা.) বললেন: এই পৃথিবীতে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি ও কর্মীবৃন্দ রয়েছেন; আর এই নারী হচ্ছেন আল্লাহর সেই কর্মীবৃন্দের সদস্য। এই ধরনের স্ত্রীই একজন শহিদের অর্ধেক বিনিময় পাবেন।[9]

   আমিরুল মোমেনিনেরও (আ.) এরূপ মহৎ উদ্দেশ্য দৃষ্টিতে ছিল। কেননা তিনি হজরত জাহরার (আ.) বিষয়ে বলেন: আল্লাহর আনুগত্যের পথে সর্বোত্তম তিনি আমার সাহায্যকারিনী।

   ইতিহাসে এরূপ এসেছে যে, হজরত আলি ও হজরত জাহরার (আ.) বিবাহ উৎসবের পরের দিন আল্লাহর রসুল (সা.) তাঁদেরকে মোবারকবাদ দেয়ার জন্যে ও হাল-হকিকত জিজ্ঞাসা করার জন্যে তাঁদের গৃহে গমন করেন। হজরত আলিকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার স্ত্রীর ব্যবহার কেমন দেখলে? তিনি বললেন: আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে হজরত জাহ্‌রাকে সর্বোত্তম সহযোগিনী হিসেবে পেয়েছি। অতঃপর তিনি (সা.) হজরত জাহ্‌রাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ¯^vgxi ব্যবহার কেমন দেখলে? তিনি বললেন: —সর্বোত্তম ¯^vgx|Õ[10]

   আমিরুল মোমেনিন (আ.) এই ছোট বাক্যটিতে, একদিকে উপযুক্ত স্ত্রী ও ইসলামের দৃষ্টান্তকে পরিচিত করিয়েছেন এবং অপরদিকে বিবাহের মৌলিক ও প্রকৃত উদ্দেশ্যকে বর্ণনা করেছেন।

 

[1]| myiv: i“g (30), 21Zg AvqvZ|

[2]| Iqvmv‡qjyk& wkqvn&, 14Zg LÊ, c„. 3|

[3]| cÖv¸³|

[4]| cÖv¸³|

[5]| cÖv¸³, c„. 23|

 1| cÖv¸³, 14Zg LÊ, c„. 5|

[7]| cÖv¸³, c„. 6|

[8]| cÖv¸³, c„. 23|

[9]| cÖv¸³, c„. 17|

[10]| wenvi“j AvbIqvi, 43Zg LÊ, c„. 117|